ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO): ওয়েবসাইট গুগল সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করানোর জন্য আমরা এসইও করে থাকি। আমাদের সবারই একটি চাওয়া থাকে ওয়েবসাইটটি যেন গুগলের রেঙ্কএ আসে। তাই অনেকেই ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) করে দ্রুততম সময়ে ওয়েবসাইটকে রেঙ্কএ নিয়ে আসেন।
প্রশ্ন হল ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কি? ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কেন করে? ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এর পরিনাম কি? সব প্রশ্নের উত্তর আমরা এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে আজকে জানবো। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কি?
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) হল এমন একটি কৌশল বা পদ্ধতি যা সার্চ ইঞ্জিনের নিয়ম লঙ্ঘন করে ওয়েবসাইটকে র্যাঙ্ক করতে ব্যবহৃত হয়। ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কৌশল একটি সাইটের র্যাঙ্কিং বাড়ানোর জন্য সার্চ ইঞ্জিন অ্যালগরিদমকে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে। মানে সোজা ভাবে বললে, search engine এর মধ্যে top ranking পাওয়ার উদ্দেশ্যে এই প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়ে থাকে।
গুগল ও বিং সার্চ ইঞ্জিন তাদের নির্দেশিকায় স্পষ্ট করে বলে দিয়েছে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও তাদের শর্তের বিরুদ্ধে। এ ধরণের কর্মকান্ডের ফল কি হতে পারে সে সম্পর্কেও তারা তাদের পলিসিতে উল্ল্যেখ করে রেখেছে।
এই প্রক্রিয়াতে কেবল search engine এর ওপরে ফোকাস (focus) করা হয় এবং কনটেন্ট কোয়ালিটি বা ইউসার এক্সপেরিয়েন্স নিয়ে ধ্যান দেওয়া হয়না।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) কৌশল ব্যবহার করলে আপনার ওয়েবসাইটকে শাস্তি এর আওতায় আনা হতে পারে। যেমন: অ্যালগরিদমিকভাবে বা ম্যানুয়াল অ্যাকশনের মাধ্যমে আপনার সাইটের রেঙ্ক থেকে সরিয়ে দিবে, অর্গানিক ট্রাফিক কমিয়ে দিবে। অনেক ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট ব্লক করে দেয়া হয়।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও করলে কি কি ঝুঁকি রয়েছে?
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) - তে অনেক ঝুঁকি রয়েছে। যা আপনার সাইটের রেঙ্ক এর সাথে সরাসরি জড়িত। তাই যারা এসইও এক্সপার্ট আছেন তারা ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কে এড়িয়ে চলেন।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনেকে জানা সত্ত্বেও সার্চ ইঞ্জিনের নির্দেশিকা অমান্য করে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও ব্যবহার করে সাইট রেঙ্কে নিয়ে আসেন। তাদের উদ্দেশ্য থাকে দ্রুত অর্গানিক ট্রাফিক পাওয়া।
কিন্তু বাস্তব অর্থে লাভের বদলে ক্ষতি হয় বেশি।
সার্চ রেঙ্কিং কমে যায়
প্রথমদিকে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) করলে সার্চ রেঙ্কিং পেলেও তা লং টাইম টিকে না। কারণ গুগলের সার্চ এলগোরিদম অনেক স্মার্ট। প্রতিবছর গুগলের সার্চ ইঞ্জিন আরও আপডেট হচ্ছে। সার্চ ইঞ্জিন খুব সহজেই Black Hat SEO ধরে ফেলতে পারে। কারণ এলগোরিদমগুলো আর্টিফিসিয়াল বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে।
ব্ল্যাক হ্যাট এসইওর প্রধান শাস্তি হল সার্চ রেঙ্কিং একদম ডাউন হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে অর্গানিক ট্রাফিক কমে আসে এবং এটি সরাসরি সাইটের সেল ও ইনকামে খারাপ প্রভাব ফেলে।
তাছাড়া ব্ল্যাক হ্যাট এসইওর মাধ্যমে রেঙ্ক করা সাইট বেশি দিন তার রেঙ্কিং ধরে রাখতে পারে না।
ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কমে যায়
এসইওর জন্য ইউজার এক্সপেরিয়েন্স গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খারাপ হলে সাইটের রেঙ্ক ধীরে ধীরে কমে যায়।
যারা Black Hat SEO চর্চা করে তারা ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর দিকে তেমন নজর দেন না। কারণ তারা ইউজারদের জন্য কনটেন্ট লিখে না বরং সার্চ ইঞ্জিনের জন্য লিখে।
বিশ্বাসযোগ্যতা সাইট রেঙ্কিং এর জন্য বড় একটি ফেক্টর। ব্ল্যাক হ্যাট এসইও কখনই সার্চ ইঞ্জিন ও ইউজারদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারে না।
৬ টি Black Hat SEO কখনই করবেন না
যখই এসইও কথা আসে তখনই আসে কিভাবে এসইও করবো? আপনার কোন কৌশলগুলি ব্যবহার করা উচিত এবং কোনটি ব্যবহার করা উচিত নয় তা জানা প্রায়শই কঠিন। অনেকেই নিজের অজান্তে ব্ল্যাক হ্যাট এসইওর কৌশল অবলম্বন করে। কারণ তারা সঠিকভাবে জানে না ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) কোনগুলো।
কিওয়ার্ড স্টাফিং
পেজে অতিরিক্ত কিওয়ার্ড ব্যবহার করলে তা এসইও তে ভালো কাজ দিবে এমন ধারণা সঠিক নয়। এতে উল্টো ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কিওয়ার্ড স্টাফিং অধিক ব্যবহার করা হয়।
এলোমেলোভাবে কিওয়ার্ড ব্যবহার করার ফলে বিষয়বস্তুর যাথার্থ ইউজাররা সঠিকভাবে বুঝতে পারেন না। ফলে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কমে যায়।
সার্চ ইঞ্জিনকে বোকা বানানোর জন্য কিওয়ার্ড স্টাফিং করে রেঙ্ক পাওয়া গেলেও অন্যদিকে ইউজার এক্সপেরিয়েন্স কম থাকার কারণে পরবর্তীতে সাইট রেঙ্ক হারিয়ে ফেলে।
তাই, আর্টিকেলে keyword এর ব্যবহার সব সময় কীওয়ার্ড ডেন্সিটি (keyword density) মেনেই করা দরকার।
ডুপ্লিকেট কনটেন্ট
"Content is the Key to success" কিন্তু ভালো কনটেন্ট লেখা খুব সহজ বিষয় না। তাই অনেকেই ডুপ্লিকেট কনটেন্ট বা অটো জেনারেটেড(Bot) কনটেন্ট-এর আশ্রয় নিয়ে থাকেন। এসব কনটেন্ট এর মান খুবই নিম্নমানের হয়। কিওয়ার্ড এর আধিক্য বেশি থাকে। সার্চ ইঞ্জিন ডুপ্লিকেট কনটেন্ট পছন্দ করে না।
নতুন ব্লগাররা এই ধরণের প্রক্রিয়া ব্যবহার করার ভুল অনেক সহজেই করে ফেলেন। এই ধরণের copy করা content গুলোকে গুগল অনেক সহজেই চিনে নিতে পারে যার ফলে সেই কপি করা কনটেন্ট ভবিষ্যতে ranking হারিয়ে ফেলে।
টেক্সট লুকানো
লুকানো টেক্সট(Invisible keywords) হল সেই টেক্সট যা ব্যাকগ্রাউন্ডের মতো একই রঙের যা স্ক্রিনের বাইরে বা ছবির পিছনে অবস্থান করে, উদ্দেশ্যমূলকভাবে CSS ব্যবহার করে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে লুকানোর জন্য বা এমনকি শূন্যের ফন্ট সাইজ ব্যবহার করে। এটি প্রতারণামূলক কিন্তু কখনও কখনও কীওয়ার্ড স্টাফ করতে ব্যবহৃত হয়।
ক্লোকিং
ক্লোকিং হল এমন একটি কৌশল যাতে ব্যবহারকারী এবং সার্চ ইঞ্জিনকে বিভিন্ন বিষয়বস্তু বা URL পরিবেশন করা হয়, অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিন ও ইউজারদের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দেয়।
আপনি যে কিওয়ার্ড নিয়ে লিখছেন আসলে তার কোন অস্তিত্বই আপনার লিখাতে নেই। এটি প্রতারণামূলক একটি কাজ।
পেইড লিংক
আমরা প্রত্যেকেই জানি ওয়েবসাইটের search engine ranking বাড়ানোর ক্ষেত্রে backlink কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
বর্তমান সময়ে Link schemes ব্ল্যাক এসইওতে বেশি ব্যবহার করা হয়। আর এটি নিয়েই সকলের দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। কারণ এটি সরাসরি ব্যাকলিংকের সাথে জড়িত। অনেকে ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য ভুল পথ বেছে নেন। তাছাড়া নেটে অনেকেই কম দামে অনেক ব্যাকলিংক কিনার অফার দিয়ে থাকে।
কিন্তু এইসব ব্যাকলিংক বাস্তবিক অর্থে তেমন কাজে আসে না। সাইট রেঙ্ক করার জন্য আপনাকে ভালো ব্যাকলিংক পেতে হবে। সবধরণের ব্যাকলিংক সাইটের জন্য ভালো না।
তাই ব্যাকলিংক পাওয়ার জন্য নিচের কাজগুলো পরিহার করুন:
- পেইড লিংকে rel="nofollow" বা rel="sponsored" attribute না থাকা।
- অতিরিক্তমাত্রায় লিংক এক্সচেঞ্জ করা।
- স্প্যাম কমেন্ট।
- ফোরাম কমেন্ট।
- গেস্ট পোস্টিং এর জন্য campaign করা।
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে লিংক বিল্ডিং করা।
- স্প্যামি ডাইরেক্টরি সাইটে ব্যাকলিংক নেওয়া।
- সাইটের ফুটারে বা সাইডবারে লিংক।
সম্পর্কহীন মেটা বিবরণ
যেকোনো আর্টিকেল লিখার পরে আমরা মূলত web-page এর description এর জায়গায় আর্টিকেল কোন বিষয়ে লিখা হয়েছে সেই বিষয়ে একটি short description দিয়ে থাকি।
এই description সাথে বারবার targeted keywords এবং unrelated keywords এর ব্যবহার করা হয় যাতে search engine এর মধ্যে অনুপযুক্ত ভাবে ranking পাওয়া যেতে পারে।
Meta description এর মধ্যে targeted keywords ব্যবহার করাটা জরুরি তবে বারবার একি কীওয়ার্ড এর ব্যবহার বা অপ্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড এর ব্যবহার করাটা একটি spam technique.
কিভাবে ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এড়ানো যায়
ব্ল্যাক হ্যাট এসইও এড়ানোর সর্বোত্তম উপায় হল হোয়াইট হ্যাট এসইও অনুশীলনের উপর ফোকাস করা যা সার্চ ইঞ্জিনের শর্তাবলী অনুসরণ করে। হোয়াইট হ্যাট এসইও হল সার্চ ইঞ্জিনের জন্য একটি ওয়েবসাইটকে এমনভাবে সাজানোর অনুশীলন যা সার্চ ইঞ্জিনের পরিষেবার শর্তাবলী লঙ্ঘন করে না। এর মধ্যে রয়েছে,
- Quality content
- Proper keyword optimization
- Website loading speed
- Mobile friendly website
- Quality backlinking / link building
- Internal linking
আশা করছি ব্ল্যাক হ্যাট এসইও (Black Hat SEO) সম্পর্কে আপনাদের কিছুটা ধারণা দিতে পেরেছি। সার্চ ইঞ্জিন দিন দিন তাদের এলগোরিদমের পরিবর্তন আনছে। গুগল প্রতি বছর কোর উপডেট দিয়ে থাকে। এবং প্রতিবার উপডেটে অসংখ্য সাইট রেঙ্ক হারিয়ে ফেলে। তাই Black Hat SEO না করে হোয়াইট হ্যাট এসইও করার পরামর্শ রইল। এতে আপনার ওয়েবসাইট রাঙ্কে আসবে কোনোপ্রকার ক্ষতি ছাড়া।