অনলাইনে ডলার-পাউন্ড-ইউরোর পাশাপাশি কেনাকাটা করা যায় বিটকয়েনে। তবে অন্যান্য মুদ্রাব্যবস্থায় যেমন সে দেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক জড়িত থাকে, বিটকয়েনের ক্ষেত্রে তা নয়। ২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামের কেউ কিংবা একদল সফটওয়্যার ডেভেলপার নতুন ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রার প্রচলন করে। এ ধরনের মুদ্রা ক্রিপ্টোকারেন্সি নামে পরিচিতি পায়। নাকামোতোর উদ্ভাবিত সে ক্রিপ্টোকারেন্সির নাম দেওয়া হয় বিটকয়েন।
বিটকয়েন লেনদেনে কোনো ব্যাংকিং ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অনলাইনে দুজন ব্যবহারকারীর মধ্যে সরাসরি (পিয়ার-টু-পিয়ার) আদান-প্রদান হয়। লেনদেনের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করা হয় ক্রিপ্টোগ্রাফি নামের পদ্ধতি।
এখন হয়তো আপনার মনে একটি সাধারণ প্রশ্ন অবশই আসছে।
“১ বিটকয়েন সমান কত টাকা” তাই তো?
তাহলে, এর উত্তর আলাদা আলাদা দেশ এর ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা হবে।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে, “১ বিটকয়েন সমান 1,746,448.05 Bangladeshi Taka “.
তবে মনে রাখবেন, ১ bitcoin এর এই মান (value) প্রত্যেক দিন ওপর নিচ হতেই থাকে। তাই, জরুরি না যে আমি যেই সংখ্যা দিয়েছে, চিরকাল সেটাই থাকতে হবে। কালকেই হয়তো, এর থেকে দুগুণ বেশি বা কম হয়ে যেতে পারে। হে, কিছুটা শেয়ার মার্কেট (share market) এর মতোই লাগছে, তাই তো। তবে, শেয়ার মার্কেটের সাথে বিটকয়েন এর কোনো যোগসূত্র (link) নেই।
সোজা ভাবে, বিটকয়েন কাকে বলে?
বিটকয়েন মানে হলো, এক decentralized virtual currency.
এর মানে হলো, এ এমন এক ধরণের মুদ্রা (currency), যেটাকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কোনো ধরণের bank, authorities’ বা government নেই। সোজা ভাবে বললে, bitcoin এর কোনো মালিক নেই।
যেভাবে, ইন্টারনেটের কোনো মালিক নেই কিন্তু আমরা সবাই এর ব্যবহার করে লাভ নিচ্ছি, ঠিক সেভাবেই, বিটকয়েন এর কোনো মালিক নেই তবে জেকেও ডিজিটালি (digitally) এই মুদ্রার ব্যবহার করতে পারবেন।
তাহলে আশা করছি, “বিটকয়েন মানে কি” (bitcoin meaning in Bengali) বেপারটা আপনারা বুঝতে পারলেন।
বিটকয়েন কে আবিষ্কার করেছেন?
২০০৯ সালে, “Satoshi Nakamato” নামের একজন ব্যাক্তি বিটকয়েনের আবিষ্কার করেছিলেন।
তবে, সেই সময় বিটকয়েন এর জনপ্রিয়তা ও লোকপ্রিয়তা আজকের সময়ের মতো কখনোই ছিলোনা। Wikipedia.org ওয়েবসাইটের মতে, যখন ২০০৯ সালে বিটকয়েন আবিষ্কার করা হয়েছিল, তখন ২০০৯ থেকে ২০১০ এর ভেতরে, ১ বিটকয়েন এর মান (value) প্রায় কিছুই ছিলোনা।
তবে, ২০১০ সালের মার্চ মাসে, ১ বিটকয়েন সমান $0.003 এবং জুলাই মাসে $0.008–$0.08 ভেতরে থাকে। তারপর, ২০১২ সালের পর প্রায় ২০১৩ সালের থেকে, ১ বিটকয়েনের মান তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পায়। আপনারা চাইলে wikipedia ওয়েবসাইটের “history of bitcoin” পাতাতে গিয়ে সম্পূর্ণটা দেখে নিতে পারবেন। তারপর, গিয়ে গিয়ে, ২০২০ সালের আজকের দিনে ১ বিটকয়েনের মান কয়েক লক্ষ টাকা (গুগলের হিসেবে)। তাই ভাবুন, যদি আপনি বিটকয়েন চালু হওয়ার প্রথম ২ থেকে ৩ বছরের ভেতরে কিছুটা কিনে রাখতেন, তাহলে আজ ১০০ বা ২০০ টাকার বদলে কয়েক লক্ষ টাকার মালিক হয়ে দাঁড়াতেন।
তবে, আমি জানলে আমিও অবশই কিনেই রাখতাম। এবং, এভাবেই বিটকয়েনের মাধ্যমে প্রচুর লোকেরা টাকা আয় করছেন। কিন্তু, কপাল এবং সুযোগ বলেও কিছু কথা রয়েছে যেটা সবাইর ক্ষেত্রে দেখা দেয়না।
বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে?
দেখুন, বিটকয়েন কিভাবে কাজ করে, এই প্রশ্নটি বেশি জটিল ভাবে নিয়ে কোনো লাভ নেই।
চলুন, আমরা সহজ ভাষায় জেনেনেই যে, বিটকয়েন কাজ কিভাবে করে। আমি আগেই বলেছি যে, বিটকয়েন হলো এক রকমের ইলেক্ট্রনিক মুদ্রা বা ডিজিটাল মুদ্রার। এবং, এই ধরণের মুদ্রা ব্যবহার, আদান প্রদান বা কেনা বেচার জন্য, ইন্টারনেটের প্রয়োজন।
কিভাবে বিটকয়েন আয় করা যায়?
বিটকয়েন আয় করার মূলত তিনটি প্রধান উপায় বা মাধ্যম রয়েছে। প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো,
টাকা খরচ করে বিটকয়েন কেনা.
যদি আপনার কাছে টাকা রয়েছে তাহলে টাকার বিনিময়ে একটি সম্পূর্ণ বিটকয়েন কিনে নিতে পারবেন। তবে বর্তমানে, সম্পূর্ণ একটি বিটকয়েন কেনার জন্য আপনার 7251 ডলার খরচ করতে হবে। তাছাড়া, আপনি চাইলে বিটকয়েনের ছোট ছোট অংশ বা ইউনিট (units) কিনে নিতে পারবেন। যেমন ১ টাকায় ১০০ পয়সা, ঠিক সেভাবে একটি বিটকয়েনে অনেক ছোট ছোট ইউনিট (unit) রয়েছে যেগুলোকে satoshi বলা হয়। ১ টি বিটকয়েনে ১০ কোটি সাতোশি (satoshi) থাকে। এবং, আপনারা অনেক কম টাকা খরচ করে এই ছোট satoshi গুলি কিনে নিতে পারবেন। আপনি চাইলে ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ১ হাজার টাকা বা ১০,০০০ টাকার সাতোশি বা ছোট ছোট বিটকয়েন ইউনিট কিনে নিতে পারবেন। এবং ভবিষ্যতে, যখন আপনার কেনা বিটকয়েনের মান বা ভেলু অধিক হয়ে যাবে, তখন আপনি আপনার বিটকয়েন গুলি বিক্রি করে অধিক টাকা ও লাভ আয় করে নিতে পারবেন।
দ্বিতীয় মাধ্যমটি হল,
যদি আপনি কোন পণ্য অনলাইনে বিক্রি করছেন তাহলে তার বিনিময়ে কাস্টমার থেকে বিটকয়েন নিয়ে নিতে পারবেন।এভাবে, আপনার পন্য (product) বিক্রিও হয়ে গেলো এবং তার বিনিময়ে কিছু পরিমাণে বিটকয়েন আয় করে নিতে পারবেন। এভাবে নিয়ে নেওয়া বিটকয়েন আপনার বিটকয়েন ওয়ালেট একাউন্টে জমা হয়ে থাকবে। তাছাড়া, আপনি চাইলে ভবিষ্যতে সেই বিটকয়েনের সংখ্যা গুলি অধিক লাভ দেখে বিক্রি করতে পারবেন বা কেনা বেচার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবেন।
বিটকয়েন আয় করার তৃতীয় উপায়,
বিটকয়েন আয় করার তৃতীয় এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায় হলো, বিটকয়েন মাইনিং (bitcoin mining). বিটকয়েন মাইনিং ব্যাপারটা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা এবং এ ব্যাপারে আপনার প্রচুর জ্ঞান অবশ্যই থাকতে হবে. এক্ষেত্রে আপনার একটি কম্পিউটারের প্রয়োজন হবে এবং যার প্রসেসর এবং হার্ডওয়ার অধিক উন্নতমানের এবং শক্তিশালী হওয়া জরুরী।
চলুন, বিটকয়েন মাইনিং কাকে বলে, ব্যাপারটা ভালো করে জেনেনেই।
বিটকয়েন মাইনিং কি?
আমরা বিটকয়েনের ব্যবহার অনলাইন পেমেন্ট বা ট্রানজেকশনের ক্ষেত্রে করি. এবং, যখন এই ধরনের বিটকয়েনের অনলাইন ট্রানজেকশন হয়ে থাকে, তখন ট্রানজেকশন গুলিকে ভেরিফাই করা হয়। যারা এই bitcoin transaction গুলিকে verify করেন, তাদেরকে বলা miners.আর, bitcoin transaction verifies করার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় বিটকয়েন মাইনিং। এই miner’s দের কাছে high performance থাকা কম্পিউটার সিস্টেম থাকতেই হবে। ট্রানজেকশন ভেরিফাই করার ক্ষেত্রে, তারা দেখেন যে, হয়ে যাওয়া ট্রানজেকশনটি সঠিকভাবে হয়েছে তো? সেখানে কোনো রকমের জালি প্রক্রিয়া বা মাধ্যম ব্যবহার করা হয়নি তো? এই ধরনে বিটকয়েন ট্রানজেকশন গুলির ভেরিফিকেশন করার ফলে বিটকয়েন মাইনার (miners) দের কিছু বিটকয়েন উপহার স্বরূপে দেওয়া হয়। এবং এভাবেই, অনেক ভালো পরিমাণের বিটকয়েন তারা আয় করে নিতে পারছেন।
Cryptocurrency For Beginners in Bengali ।। What are Cryptocurrency and Blockchain ।। Writers Gild:-