NFT – Non Fungible Token কথাটার অর্থ হলো যেটার কোন পরিবর্তন করা সম্ভব নয় অর্থাৎ এটি একটি মাত্র এবং এর একটি আলাদা মূল্য আছে । মনে করেন, আপনার কাছে ৫০ টাকার একটি নোট আছে, আপনি চাচ্ছেন সেটা ভাংতি করানোর জন্য, এখন কোন এক দোকানি এই ৫০ টাকার বিনিময়ে আপনাকে ২ টা ২০ টাকার নোট এবং ১ টা ১০ টাকার নোট দিলেন । অর্থাৎ আপনার দেয়া এক নোটের বিনিময়তে ৩ টা নোট দেয়া হলো যার মূল্য দাড়ায় ৫০ টাকা । আর টাকার এই একটা ৫০ টাকার নোট দিয়ে ৩ টা নোট পাওয়ার বিনিময় হবার ঘটনাকে বলে Fungible।
অপর দিকে আবার মনে করেন, আপনার দাদা আপনাকে উনি মারা যাবার আগে একটি অরিজিনাল চায়না ফনিক্স সাইকেল দিলেন যা আপনার কাছে অনেক ভালবাসার এবং দাদার দেয়া স্মৃতি । এখন কেউ যদি ঐ রকম সেইম নতুন দেখতে একটা সাইকেল আপনাকে দেয় তাহলে কি আপনি তা বিনিময় করবেন? নিশ্চয়ই না কারণ আপনার দাদার দেয়া জিনিস একটা এবং এটার কোন পরিবর্তন সম্ভব না এবং ঐ জিনিসের একটি Antique মূল্য আছে । আর বিনিময় না হবার এই ঘটনাকে বলা Non Fungible।
এখন আসি টোকেন ব্যাপারটা নিয়ে মনে করেন আপনি একটি গাড়ি কিনতে গেলেন শোরুম থেকে আপনাকে গাড়ির মালিকানা বুঝানোর জন্য কয়েকটি পেপার দেয়া হলো যার ফলে কেউ মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন করলে দেখাতে পারেন । আর ঠিক এই ব্যাপারটা ডিজিটাল দুনিয়াই করার নিয়মকে বলে টোকেন অর্থাৎ ডিজিটাল কোন প্রোডাক্ট এর মালিকানা নিয়মকে বা ডিজিটাল রেকর্ডকে টোকেন বলেন । আর এই পুরা ব্যাপারটা পরিচালনা করা হয় ব্লক চেইন টেকনোলজি তে । আপনারা যারা জানেন না ব্লক চেইন কী এবং কিভাবে কাজ করে তারা আমার ব্লক চেইন নিয়ে আর্টিকেল পরে আসতে পারেন।
NFT কিভাবে কাজ করে?
এন এফ টি ব্যাপারটা কাজ করে পুরোপুরি ডিজিটালি। NFT কে বলা যেতে পারে ডিজিটাল অ্যাসেট । দুনিয়া যেভাবে ডিজিটাল ভাবে এগিয়ে যাবে এই অ্যাসেট এর পরিমাণ তত বাড়বে । বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত NFT থেকে উদাহরণ দেয়া যেতে পারে । Mike Winkelmann নামক একজন ডিজিটাল আর্টিস্ট ।
উনি তার গত ১৪ বছর ধরে প্রতিদিন একটি করে ছবি আঁকেন এবং তার মোট ছবির পরিমাণ দাড়ায় ৫ হাজারেরও বেশি । যার সবগুলো ছবি একত্র করে উনি একটি ফ্রামে নিয়ে আসেন এবং তা অনলাইনে বিক্রি করেন ৬৯ মিলিয়ন ডলার দাম দিয়ে যা ছিল একটি NFT করা ছবি। এতে আরেকটি মজার ব্যাপার হলো সর্বপ্রথম যে ব্যক্তি তার কোন জিনিস NFT করবে পরবর্তীতে তার থেকে কেনা কাস্টমার যদি সেটি অন্য কারো কাছে বিক্রি করে দেয় তাহলে সবার প্রথমে যে ব্যক্তি NFT করেছিলেন সে ১০% রয়্যালটি পাবে । তাহলে প্রশ্ন হতে পারে যে জিনিস গুলো আমরা সহজে ডাউনলোড করতে পারি সেগুলো NFT করার কি দরকার? এতে আমরা এক কথায় বলতে পারি এন এফ টি হল ডিজিটালি কোন নিজস্ব প্রোডাক্ট এর উপরে মালিকানা আরোপ করা অর্থাৎ কেউ যদি আপনার সেই জিনিসটার ডাউনলোড করে বা করতে যায় তাহলে আপনার মালিকানা সেখানে শো করবে অর্থাৎ এখানে দেখাবে যে আপনার এই প্রোডাক্টটি রেজিস্টার করা ।
NFT করার নিয়ম কি কি?
প্রথমে আপনাকে NFT করা এমন কোন ওয়েবসাইট নিজেকে রেজিস্টার করতে হবে।এরকম অনেক ওয়েবসাইট এখন এভেলেবেল আছে। যেমনঃ opensea, makersplace, niftygateway ইত্যাদি। এগুলোকে NFT মার্কেটপ্লেসে বলা যেতে পারে । এই মার্কেটপ্লেসগুলো সাধারণত ইথেরিয়াম নিয়মে চলে আর এই ইথিরিয়াম হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি।
NFT ক্ষেত্রে আপনাকে একটি ইথেরিয়াম ওয়ালেট তৈরি করতে হয় আর এই সকল ট্রানজেকশন ইথেরিয়াম ওয়ালেট এর মধ্যেই হয়। ইথেরিয়াম ব্যবহার করার জন্য আপনাকে কিছু ইথেরিয়াম কয়েন রাখতে হয় ওয়ালেট। তারপর আপনার ওয়ালেট আপনার সম্পর্কে ভেরিফাই করে এবং আপনার ডিজিটাল আর্টটি একান্তই আপনার কিনা এবং এর বিশেষত্ব কি, এটি ইউনিক কিনা, এসব যাচাই করা হয়। এই কাজকে বলা হয় মিন্টিং আর এই পুরো ব্যাপারটা পরিচালনা হয় ব্লক চেইন এর আন্ডারে।
দ্বিতীয় ধাপে আপনার ডিজিটাল আর্টটি মার্কেটপ্লেসে বিক্রির জন্য তোলা হয় এবং এটি ব্লকচেইন টেকনোলজির আন্ডারে কাস্টমার এবং বিক্রেতা শর্তগুলো দিয়ে বিক্রির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।
NFT এর সুবিধা-অসুবিধা?
NFT সুবিধা বলতে গেলে যারা ডিজিটাল আর্টিস্ট আছে এবং তাদের এতদিনে পরিশ্রম কিছুটা হলেও সমাধান দেওয়া যেতে পারে এবং ডিজিটাল ক্রিয়েশন গুলোকে ভ্যালুয়েশন এর মধ্যে আনা যেতে পারে আবার পুরো সিস্টেম টা ব্লক চেইন এর আন্ডারে হওয়ার কারণে কাস্টমার এবং সেলার মধ্যে কোন third-party থাকছে না যার ফলে এক্সট্রা কমিশন লাগবে না যাতে সঠিক সম্মানী কাস্টমার পাচ্ছেন।পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে এবং যে কোন মানুষ NFT কিনতে পারবে যা অন্য কোন কেনাবেচায় হয় না ।
অপরদিকে যদিও প্রত্যেকটা আর্ট ভেরিফাই করার পরে মার্কেটপ্লেসে আসে কিন্তু এমনও হতে পারে অনেক মানুষ এমন ডিজিটাল সাইন বা এসব জানেন না এবং তার সুযোগ অন্য কেউ নিয়ে নিয়েছে অর্থাৎ আর্টটা কোন হবে চুরি হয়ে গেছে। আর যেহেতু এটি ব্লকচেইন ক্রিপ্টো কারেন্সি আন্ডারে তাই মাইনিং ছাড়া এত পরিমান ট্রানজেকশন সম্ভব না আর আমরা সবাই জানি ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে বিপুল পরিমাণ কার্বন নির্গত হয় যা আমাদের পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক আবার এমনও হতে পারে যেহেতু এটি একটি ট্রেন্ড হুট করে এটা শেষ হয়ে যেতে পারে এতে ক্ষতি হতে পারে অনেক মানুষের । এখন প্রশ্ন হতে পারে, এত দাম দিয়ে এইসব কেনার কি দরকার?
আসলে এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে গেলে বলা যেতে পারে মানুষের সাইকোলজি বলে মানুষ মালিক হয়ে নিজেকে খুবই গর্বিত বোধ করে আর যেহেতু পৃথিবী ডিজিটাল মুভ করছে যার ফলে ভবিষ্যতের সকল কার্যক্রম ডিজিটালি করতে হতে পারে এবং এরই ধারাবাহিকতায় এই মালিকানা বিষয়টি উঠে আসে যদিও ব্যাপার গুলো খুবই জটিল আশা করছি সময়ের সাথে সাথে এই ব্যাপার গুলো নিয়ে বোঝা যাবে আরও যেহেতু এন এফ টি একটা ইউনিক ব্যাপার যার ফলে মানুষ এতে আকৃষ্ট হওয়ার অনেক চান্স।