Web 1.0 এবং Web 2.0 কী?
১৯৮৯ সালে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web) চালু করেছিলেন টিম বার্নার্স-লি। এবং এটাকে ইন্টারনেটের প্রথম ভার্শন বলা হয় বা web 1.0। এই ভার্সনে ইন্টারনেট কেবলমাত্র একমুখী মাধ্যম হিসেবে কাজ করতো। Web 1.0 ইন্টারনেট খুললেই সেই সাইটের তথ্যাবলী আমরা কেবলমাত্র দেখতে পেতাম। অর্থাৎ যিনি দেখাচ্ছেন, সার্ভারের মাধ্যমে আমাদের দেখাটাই ছিল একমাত্র কাজ। ওই সাইটের মধ্যে আমরা কোন কিছুই নিজেদের কাজকর্ম করতে পারতাম না। যদি আপনারা লক্ষ করে তাহলে দেখতে পাবেন যে, বর্তমান সময়ে ইউটিউবে কোন ভিডিও দেখার পর ঐ ভিডিও সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে ঐ ভিডিওর কমেন্ট বক্সে আমরা কমেন্ট করতে পারি। যেটা Web 1.0 ব্যবহারের সময় করতে পারতাম না। Web 1.0 এর এইসব ওয়েবসাইটকে বলা হতো: Static Website ।
পরবর্তীতে 1999-2000 সালের থেকে এবং এর পরবর্তী সময়ে ইন্টারনেটের ভার্সন web 2.0 শুরু হয়। Internet web 2.0, ইন্টারনেট এবং কম্পিউটার যুগের এক বিপ্লব নিয়ে আসে। এই ভার্সন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়ে যায় এক টালমাটাল সাংঘাতিক প্রতিযোগিতা, দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে স্বল্প সময়ের সদ্ব্যবহার। এবং এইখানে আমরা কোন তথ্য অ্যাড, এডিট, আপলোড, ডিলিট করতে পারি ।
Web 1.0 এবং Web 2.0 এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলোঃ Web 2.0 ওয়েবসাইটগুলিতে ব্যবহারকারীরা তাদের কাজ তৈরি করতে বা করতে সহযোগিতা করতো এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। Web 2.0 এর উদাহরনের মধ্যে রয়েছেঃ গুগল মানচিত্র, ইউটিউব, ওয়ার্ডপ্রেস, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি। তবে এইখানে সব চেয়ে বড় যেটা প্রবলেম বলে অনেকে মনে করেন তা হলো Web 2.0 এর মূল উদ্দেশ্য ছিলো ইউজারদের কাছে বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন প্রচার করা।
তথ্য জানার আগ্রহে যেমন নিজের মোবাইল নাম্বার, ইমেইল আইডি, নাম আমরা ওয়েবসাইকে জানিয়ে দিচ্ছি এবং কোন কিছু কেনার জন্য যেকোনো ই-কমার্স সাইটে গিয়ে মোবাইল নাম্বার, ইমেইল এবং নামসহ রেজিস্ট্রেশন করছি । এই সিস্টেমের মধ্যে ইউজারদের বিভিন্ন ইনফর্জামেশন সংরক্ষন করার পর, সেই ব্যাক্তির প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র প্রচার করা হতো। তাই বলা যায়, Web 2.0 তে ইউজারদের প্রাইভেসিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
Web 3.0 ও ভবিষ্যৎ ইন্টারনেট
প্রযুক্তি পরিষেবা সম্পর্কে একটি প্রচলিত কথা আছে, “যদি এটি বিনামূল্যে হয়, তাহলে আপনি পণ্য”। একই নীতি web 2.0 তে প্রযোজ্য, সমস্ত বিনামূল্যে পরিষেবাগুলি ব্যক্তিগত ডেটাতে পুজি করে তাদের কাজ করে থাকে । আর এই নীতির পরিবর্তনের জন্য ২০১৪ সালে গেভিন উড ওয়েব থ্রি-র ধারণা নিয়ে আসেন। তিনি ইথেরিয়ামের উদ্ভাবক হিসেবেও পরিচিত ।এই ওয়েব থ্রি আসলে ইন্টারনেটকে তার বর্তমান অবস্থাতেই রেখে দেয় এবং তার সর্বক্ষেত্রে ব্লকচেইন যোগ করে।
ওয়েব থ্রি-র মূল ধারণাটি হল ইন্টারনেটকে সম্পূর্ণ রূপে বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং গুগল-এর জায়ান্টদের সরিয়ে দেওয়া। এই ব্লকচেনের উপরে ভিত্তি করে ইন্টারনেটের বিকেন্দ্রীকরণের অর্থই হল, ইউজারদের হাতে ‘মালিকানা’ তুলে দেওয়া। গোপনীয়তার ক্ষমতা ব্যবহারকারীর কাছে থাকবে এবং ব্যবহারকারী ইন্টারনেটের সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া নির্ধারণ করবে, কিন্তু অ্যালগরিদম নয়।
Web 3.0 কিভাবে কাজ করবে এবং সুবিধাসমূহ
ওয়েব 3.0 কয়েকটি মূল বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করবে। সেগুলো হল – Decentralized, Web, Semantic Web, AI এবং Transparency.
যেহেতু ওয়েবের পরবর্তী প্রজন্ম বিদ্যমান ওয়েবের Decentralized উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে, তাই পরিবর্তনটি কিকস্টার্ট করতে ব্যাপক অটোমেশনের প্রয়োজন হবে। নিরাপত্তা সম্পর্কিত বিদ্যমান অটোমেশন ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রয়েছে। ক্রিপ্টোকারেন্সি Decentralized অর্থ বা DeFi-এ চার্জের নেতৃত্ব দিয়েছে। সুতরাং, এটা প্রত্যাশিত যে ব্লকচেইন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি ইন্টারনেটের নতুন যুগে অটোমেশন এবং ডেটা সুরক্ষায় বিশাল ভূমিকা পালন করবে।
Decentralized এর ফলে আমরা যেসব সুবিধা পেতে পারি:-
- দক্ষ ব্রাউজিং করতে পারব, যা সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার সময়, সেরা ফলাফল খুঁজে পাওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল ।
- নিরাপত্তা – Decentralized এর কারনে আমাদের সকল ডাটা বিশ্বব্যাপী ছড়ানো থাকবে তাই বিশ্বের সব কম্পিউটারে এক সাথে হ্যাক করতে পারবেন না।
- Data Monopoly – বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া যেমন google, Facebook এর মত আরো কোম্পানির ব্যাবহারকারীর ডাটার উপর অধিকারত্ব থাকবে না কারণ web 3.0 একটি Head of the Department থাকবে যা সবকিছু কে control করবে।
তারপরে আসে Semantic এবং AI দৈনন্দিন জীবনে স্মার্ট গ্যাজেটের ব্যবহার ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। স্মার্ট হোম কন্ট্রোল, গাড়ি নিয়ন্ত্রণ এবং আরও অনেক কিছু আছে। ইন্টারনেট অফ থিংস বা IOT নতুন ওয়েবে চার্জ পরিচালনা করবে। গ্যাজেট, ইন্টারনেট এবং মানুষের মধ্যে একটি নিরবচ্ছিন্ন মিথস্ক্রিয়া জন্য, AI এর কোন বিকল্প নেই। এই সব একত্রিত করে, ওয়েব নতুন রুপে মানুষের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে দেবে। এটি মূলত একটি নতুন শুরুর মত হবে। বড় প্রযুক্তিগুলিকে তাদের পরিষেবার সরাসরি পণ্য না বানিয়ে কীভাবে ব্যবহারকারীদের পরিষেবা দেওয়া যায় তা খুঁজে বের করতে হবে।
ব্লকচেইনের বিকেন্দ্রীকৃত প্রকৃতির জন্য ব্যবহারকারীদের তাদের ডেটার উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। পছন্দ এবং ডেটা সুরক্ষার সুস্পষ্ট পছন্দের বাইরে, লোকেরা কীভাবে এবং কী বিষয়বস্তু ইন্টারনেটের মধ্যে ইন্টারঅ্যাক্ট করতে চায় তা চয়ন করতে সত্যই স্বাধীন হবে।
পরিশেষ বলা যেতে পারে, ওয়েব 3.0-এর ধারণাটি 2006 সালের প্রথম দিকে থেকে ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু বর্তমান ওয়েবের উচ্চ কেন্দ্রীয় প্রকৃতির কারণে, এটি খুব বেশি অগ্রসর হতে পারেনি। অনেক অসাধুরা মনে করেন উত্তরণ ঘটবে না। কিন্তু ওয়েব 3.0 এর ট্রিকলিং প্রভাব ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। এটা শুধু সময়ের ব্যাপার যখন বড় প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ ব্যবহারকারীদের দ্বারা সমানভাবে মিলবে।